ঔপনিবেশিক শাসনকাল থেকে শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশেও শিক্ষক প্রশিক্ষণের দায়িত্ব মূলত ন্যাস্ত ছিল সরকারের হাতেই। দেশের প্রায় হাজার দশেক মাধ্যমিক স্তরের বিদ্যালয় বেসরকারি পর্যায়ে পরিচালিত হওয়ায় সেই সমস্ত শিক্ষক প্রশিক্ষণের উপর তেমন একটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে অশির দশকের শুরুতে মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দের সরকারি সহায়ক ভাতা প্রদানের সাথে শিক্ষক প্রশিক্ষণের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। সিদ্বান্ত হয়, বেসরকারি মাধ্যমিক স্তরের যে সমস্ত শিক্ষকের বি.এড ডিগ্রি আছে তাদের বিশেষ বেতন ভাতা প্রদান করা হবে এবং প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষকের ক্ষেত্রে এই ডিগ্রি থাকা বাধ্যতামূলক। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, কর্মরত প্রায় এক লক্ষ্যাধিক শিক্ষক বি.এড প্রশিক্ষণ বিহীন। আরো দেখা যায় দেশে মাত্র ১০ টি সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আই.ই.আর থেকে ডিপ-ইন-এড কোর্সে বছরে সর্বমোট তিন হাজারের মতো শিক্ষকের প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব। দেশে শিক্ষক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার এরকম দুরবস্থার কিছুটা উপশম করার লক্ষ্যে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট কাজী রফিকুল আলম ড. খান মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলামকে বেসরকারি পর্যায়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দেন। ১৯৯২ সালে দেশের প্রথম শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়, যার নাম করণ করা হয় দেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ জন সেবক ও মানব কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ সুফি সাধক হযরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র)’র নামে। দেশের ১৫ জন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফেরদাউস খানকে সভাপতি করে গঠিত হয় প্রস্তুতি কমিটি যা পরে কলেজ পরিচালনা পরিষদে রুপান্তরিত হয়।
২০১০ সালে বাংলাদেশে সৃজনশীল প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষকগণ সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্ন করতে গিয়ে কঠিন সমস্যায় পড়ে যান। যদিও সরকারিভাবে জোরে সোরে এ বিষয়ের প্রশিক্ষণ দানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তবে সরকারি, বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল, মাদ্রাসা, কিন্ডার গার্টেন সব মিণিয়ে ৮ লাখের মত শিক্ষককে এত অলপ সময়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া দূরহ ব্যাপার। শিক্ষকদেও এ বিষয়টি উপলব্ধি করে খানবাহাদুর আহছানউল্লা টি টি কলেজ বি.এড ও এম.এড কোর্সে প্রশিক্ষণরত শিক্ষকদের ২০১৩ সাল থেকে বি.এড প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সফলতার সাথে তাদেও বিষয় ভিত্তিক সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র প্রনয়ণ ও উত্তরপত্র মূল্যায়ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। সময়ের সাথে শিক্ষার চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষকদের আ.সি. টি ডিজিটাল ক্লাসরুম ম্যানেজমেন্ট ও বিষয় জ্ঞানে দক্ষ কওে গড়ে তোলার জন্য রিভিন্ন ভাবে (ওয়ার্কশপ, সেমিনার) প্রশিক্ষণ দিচ্ছে কেএটিটিসি। এ ছাড়া শিক্ষার্থীর সুন্দও ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য কিছু জীবন দক্ষতা যা কর্তৃক সনাক্ত করা হয়েছে, কেএটিটিসি কর্তৃক এ বিষয়েও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কেএটিটিসি আরো লক্ষ্য করছে যে বি.এড প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকগণ নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে গিয়ে প্রশিক্ষণের অর্জিত জ্ঞান প্রয়োগ করছে না। এসব অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে অত্র প্রতিষ্ঠান থেকে বি.এড প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের মনিটরিং করার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে করোনা মহামারির কারণে দেশের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১৭ মার্চ ২০২০ থেকে সরকারি ভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ পরিস্থিতিতে কেএটিটিসি সব গুটিয়ে ঘরে বসে থাকেনি। অত্যন্ত সফলতার সাথে অনলাইনে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পেশাগতভাবে দক্ষ করে গড়ে তোলা হয়। অতপর সেসব দক্ষ শিক্ষকদের মাধ্যমে আন্তরিকতা ও সফলতার সাথে অনলাইনে কøাস, এ্যাসাইনমেন্ট ও টার্ম পেপার তৈরি, অনুশীলনী পাঠ দান ও মূল্যায়ন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সপ্তাহ উদযাপন এবং প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক ভাবে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া সরকারিভাবে ঘোষিত বিভিন্ন দিবস ও অনুষ্ঠান অনলাইনে পরিচালনা করা হয়েছে এবং হচ্ছে। অনলইনে ভর্তি কার্যক্রমও সম্পন্ন করা হচ্ছে।
মানসম্মত শিক্ষা বলতে যা বোঝায় তা প্রতিনিয়তই প্রমাণ করছে খানবাহাদুর আহছানউল্লা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ তার পরীক্ষার ফলাফর এবং শিক্ষা সংক্রান্ত সার্বিক কার্যক্রমের দ্বারা। ২০১৪ সালের পূর্ণমিলনী ও ২০১৭ সালের সফল ও জাকজমকপূর্ণ রজতজয়ন্তি উদযাপন অনুষ্ঠানসমূহ তারই নিদর্শন।